স্বরূপকাঠিতে বিদ্যালয়ের নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন


পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে ঘুষবাণিজ্য, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার স্বরূপকাঠি সদর ইউনিয়নের অলংকারকাঠি মনি রাম (এম আর) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ব্যানারে আয়োজিত ওই মানববন্ধনে বিদ্যালয়ের অভিভাবক, শিক্ষার্থী, নিয়োগপ্রার্থীসহ এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
ঘণ্টাব্যাপী ওই মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজন বিদ্যালয়ের নিয়োগে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদসহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ এবং ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
এ সময় এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভায় নিয়োগে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী স্বপন শীল অভিযোগ করে বলেন, আমি ওই বিদ্যালয়ের নিয়োগে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে প্রার্থী ছিলাম। আমাকে নিয়োগ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মাহফুজুর রহমান আমার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সভাপতিকে আমি ওই টাকা দিয়েও চাকরি পাইনি। সভাপতির সঙ্গে টাকা-লেনদেনের বিষয়ে মোবাইলের কল রেকর্ড আমার কাছে আছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে আবেদনকারী আরেক প্রার্থী সৌরভ সিকদার অভিযোগ করে বলেন, আমাকে নিয়োগের কথা বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর কুমার বড়াল আমার বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছেন। নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি গাছে উঠতে পারি কি না। কিন্তু আমার থেকে বেশি টাকা নিয়ে হাসনা বানু নামের এক প্রার্থীকে তারা নিয়োগ দিয়েছেন।
সৌরভের পিতা শংকর বলেন, টাকা নেওয়ার পরেও ছেলের চাকরি কেন হলো না- আমি প্রধান শিক্ষককে এমন প্রশ্ন করলে ওপরের চাপে এই নিয়োগ হয়েছে বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য সুমিত মজুমদার রাজু অভিযোগ করেন, নিয়োগে আমার স্ত্রী মিতালী হালদার ও ভাই সজিব মজুমদার অফিস সহায়ক পদে আবেদন করেন। নিয়োগ পরীক্ষায় তারা দুজনই ভালো ফলাফল করায় তাদেরকে বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ওই পদে নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
সভায় নিয়োগ বাতিলের দাবি করে আরো বক্তব্য দেন ইউপি সদস্য দেব কুমার সমদ্দার ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য রবীন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর কুমার বড়াল টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং অফিস সহায়ক পদে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় স্থগিত রাখা হয়েছে।
কল রেকর্ডের জবাবে তিনি বলেন, আমার ভয়েস নকল করে এসব সাজানো হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পরীক্ষায় কোনো দুর্নীতি হয়নি। ভেতরে যদি কেউ লেনদেন করে থাকেন সে ব্যাপারে আমি অবগত নই।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি পদের অনুকূলে ৩০ জন প্রার্থী আবেদন করলেও পরীক্ষায় ১৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এইচকেআর
