ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • ‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে : তারেক রহমান বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী হাসিনার সেই ‘৪০০ কোটি টাকার’ পিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-সঞ্চয়পত্র ফ্রিজ একজন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, একমত বিএনপি পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা আসামি : প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: ফয়জুল করীম আইএমএফের অর্থছাড়: ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো রিজার্ভ বাকেরগঞ্জের কারখানা নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়চ্ছেন মানুষ পন্টুনের ধাক্কায় ট্রলার থেকে ছিটকে নদীতে, জেলে নিখোঁজ
  • শেষ ইচ্ছা জানালেন ‘তুমি ডুব দিও না জলে কন্যা’ সহ অসংখ্য গানের গীতিকার ও সুরকার

    শেষ ইচ্ছা জানালেন ‘তুমি ডুব দিও না জলে কন্যা’ সহ অসংখ্য গানের গীতিকার ও সুরকার
    অসুস্থ সুরকার আলমগীর কবির
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    গীতিকার ও সুরকার আলমগীর কবির, যিনি সুরকে সংজ্ঞায় বেধে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সুরের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রজন্মের পর প্রন্মের আশা ও হতাশার কথা বলেছিলেন। ১১ হাজার ২শত ৯৭টি গান লিখেছেন এই গীতিকার। বাংলা চলচ্চিত্রে রয়েছে তাঁর কালজয়ী বেশ কয়েকটি গান।

    তবে কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই গীতিকারও হারিয়ে গেছেন। তাঁর গান সবার মুখে মুখে থাকলেও তাকে মনে রাখেনি। শেষ বয়সে এসে প্রাপ্য সম্মানটুকুও পাচ্ছেন না। জীবন সায়াহ্নে গীতিকারের অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটছে।
    বরগুনায় পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নে নিজ গ্রামে এখন বসবাস করছেন গীতিকার ও সুরকার মো. আলমগীর কবির আবু।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, খুবই অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় কাতরাচ্ছেন। একবার স্ট্রোক করেছেন। শোয়া থেকে পড়ে গিয়ে কোমড়ে আঘাত পেয়েছেন একবার। ডায়াবেটিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত রোগে তাঁর সারা শরীরের বাসা বেঁধেছে।

    অন্যের সাহায্য ছাড়া উঠতেও পারছেন না। তাঁর পরিবার ছাড়া অন্য কোনো শুভাকাঙ্খীরাও খোঁজখবর নিচ্ছেন না। এমনকি তাকে ভুলে গেছেন তারও গ্রামের লোকেরাই। 


    তাকে যোগ্য সম্মান দিতে পারেননি তাঁরা। চলচ্চিত্রে এতো অবদান থাকা সত্ত্বে খোঁজখবর রাখছেন না কেউ। কেমন আছেন জানতে চাইলে আলমগীর কবির হাতের ইশারা দিয়ে ছোট ক্ষীনস্বরে বলেন ‘ভালো  আছি’।

    শেষ ইচ্ছা কি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘রাজাতুমি কার’ অ্যালবামটি তুলে দিতে চাই প্রধানমন্ত্রীর হাতে। পাশাপাশি তাঁর চলচ্চিত্রসহ গানগুলো সংরক্ষণের জন্য দাবি করেন সরকার প্রধানের কাছে। এর বেশি আর কিছু বলার মতো অবস্থা তা‍ঁর নেই তাঁর।

    প্রখ্যাত গীতিকার আলমগীর কবিবের জন্ম ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে। নব্বই দশকে জীবিকার প্রয়োজনে ছায়াছবির গান রচনা শুরু করেন কিনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পীরাই তার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেলে।

    যেভাবে গানের ভুবনে এলেন:
    সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ বিজয়োল্লাসে উত্তাল। ১৭৭২ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া কলেজের স্নাতক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত কবির লিখলেন ‘বাংলা আমার বাংলা প্রিয় বাংলা, রক্ত সরোবর দুলছে আর ঊর্ধ্ব গগনে লাল একটা নতুন সূর্য জ্বলছে’
    নিজের সূর ও কন্ঠে গানটি গেয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে আর তার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই গীতিকার ও সুরকার আলমগীর কবিরের। 

    ঢাকাই সিনেমায় শত শত গান
    লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন কবির। অনেক গানই এদেশের সব শ্রেনী পেশার মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন।

    চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান
    বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে রয়েছে আলমগীর কবিরের অনেক অবদান। 
    অসংখ্য কালজয়ী
    চলচ্চিত্রের গানের স্রষ্টা তিনি। সিনেমায় তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে,‘চোখের জলে আমি ভেসে চলেছি,  ‘খোদা তোমার এ দুনিয়ায় আমি এক এতিম অসহায় পথে আমি নেমেছি হায় ক্ষুধারই জালায়’,‘আমার এ গান খানি যদি ভালো লাগে’, ‘বন্ধু তোমারে ডাকি ঘরে আর থাইকো না’,‘তুমি ডুব দিওনা জলে কন্যা’, ‘মাটির কোলে খাঁটি মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়’, ‘আজব এই শহরে ওভাই মানুষ চেনা যায় না’ এরকম অসংখ্য জননন্দিত গানের স্রষ্টা তিনি। যা শুনলে এখনও শ্রোতারা হারানো দিনের স্মৃতিতে মনে পড়ে।


    যেসব চলচ্চিত্রে তিনি গান লিখেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য - ঝিনুক মালা, মাটির কোলে, মিয়া ভাই, শিমুল পারুল, ভাই আমার ভাই, নাগ মহল, শশী পূর্ণ, কোহিনূর ইত্যাদি।

    এছাড়া ‘রাজা তুমি ঘুমিয়ে আছো’ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলমগীর কবিরের অনবদ্য সৃষ্টি। কালজয়ী গানে শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও রয়েছে অনেক জনপ্রিয়তা এবং সুনাম।


    এসব জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, এন্ড্র কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, রথীন্দ্রনাথ রায়, দিলরুবা খান, সুবীর নন্দী, খুরশিদ আলম,ইন্দ্রমোহন রাজবংশীসহ আরও অনেকে।গান লিখেছেন ১১ হাজার ২শত সাতা নব্বই।

    বার্ধক্যে এসেও অনেক গান লিখেছেন আলমগীর কবির। ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি গান লিখেছেন তিনি। এরপর আর হাতে কলম তুলে নেননি তিনি।

    জীবনের সায়াহ্নে এসে ‘হৃদয় খুলে রেখনা’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ১০৭ টি গান। এছাড়াও তিনি ১১ হাজার ২৯৭টি গান, ১১টি ডায়েরীতে লিখে রেখেছেন। প্রতিটি ডায়েরিতে ১ হাজার ২৭ টি গান রয়েছে। গীতিকারের ছোট ভাই দুলু বলেন, আমার ভাই বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় গীতিকার। তিনি সেই মূল্যায়ন পাননি এখনও। আমি চাই তিনি যেন তার সঠিক মূল্যায়ন পান।

    এছাড়াও তার একটি ইচ্ছে ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘রাজা তুমি কার’ এই টেপ রেকর্ডারের ক্যাসেটটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছে দেবেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় ক্যাসেটটি এখনও দিতে পারেননি।

    পাথরঘাটার প্রবীণ সাংবাদিক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ ও মো. মতিয়ার রহমান ফরাজী বলেন, আমরা ছোট থেকেই তার গানের ভক্ত ছিলাম। এমন একটা সময় ছিল তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো সকলের মুখে মুখে ছিল। আজ সেই আলমগীর কবির অবহেলিত। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে এতো অবদান থাকা সত্ত্বেও  গ্রামে ধুকে ধুকে দিন পাড় করছেন।

    জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.দেবাশীষ বেপারী বলেন, ‘অসাধারণ কথামালায় সাজানো দেশের গান,
    আধুনিক গানগুলো তাঁর। অনেক কিছু শিখেছি তাঁর কাছ থেকে। আধুনিক গান গাওয়ার পদ্ধতি, কণ্ঠ সুর অনেক কিছু শিখেছি তাঁর কাছে। তাঁর ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না।
    এমন গুণী মানুষ আমাদের উপমহাদেশের গৌরব। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার দাবি জানাচ্ছি।’ 
     


    এইচকেআর
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ