বাগেরহাটে দুই ট্রলার ডুবি, ৩৮ জেলেকে জীবিত উদ্ধার


বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতের সীমান্তে গিয়ে ৩৮ জেলেসহ ডুবে গেছে বাগেরহাটের শরণখোলার দু'টি ফিশিং ট্রলার এফবি কালাম ও এফবি খায়রুল ইসলাম।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের বেহেলা কয়লা নামক স্থানে দুর্ঘটনার শিকার হয় দু'টি ফিশিং ট্রলার। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলার দুটির ৩৮ জেলেকে কাছাকাছি থাকা শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেনের এফবি সোনার মদিনা ও আ. রহিমের অপর একটি ট্রলারের জেলেরা সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছে। জীবিত ৩৮ জেলেদের নিয়ে ট্রলার দুটি শনিবার রাতের মধ্যে শরণখোলায় ফেরার কথা রয়েছে।
এদিকে, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার অফিস কিল্লার চরে আটকে পড়া দুটি ট্রলারসহ ১৮ জেলেকে উদ্ধার করেছে বনরক্ষীরা। উদ্ধার জেলেরা দুবলা জেলেপল্লীর বনরক্ষীদের হেফাজতে রয়েছেন।
ভারতের সীমান্তে যাওয়া ট্রলার দুটির মালিক মো. কবির হাওলাদার ও জাকির হাওলাদার জানান, তাদের দুটি ট্রলারসহ আরো ৮ থেকে ১০টি ফিশিং ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের বেহেলা কয়লা নামক স্থানে এলাকা চলে যায়। সেখানে সন্ধ্যার দিকে সাগরে প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে তাদের ট্রলার দুটি ডুবে যায়। এ সময় কাছাকাছি থাকা শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেনের এফবি সোনার মদিনা ট্রলারের জেলেরা ২২ জনকে এবং আ. রহিমের একটি ট্রলারের জেলেরা ১৬ জনসহ মোট ৩৮ জেলেকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করেন।
উদ্ধারকারী ট্রলার দুটি জেলেদের নিয়ে সকালে শরণখোলার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলার দুটি বর্তমানে ভাসতে ভাসতে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা কাছাকাছি একটি চরে উঠে আটকা পড়ে আছে। এ ঘটনায় শরণখোলা থানায় জিডির প্রস্তুতি চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুর্ঘটনার শিকার এফবি কালাম ট্রলারের মালিক শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর এলাকার মৎস্য আড়ৎদার মো. কবির হাওলাদা এবং এফবি খায়রুল ইসলাম ট্রলারের মালিক মৎস্য ব্যবসায়ী মো. জাকির হাওলাদার।
এদিকে, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার অফিস কিল্লার চরে আটকে পড়া দুটি ট্রলারসহ ১৮ জেলেকে উদ্ধার করেছে বনরক্ষীরা। উদ্ধার জেলেরা দুবলা জেলেপল্লীর বনরক্ষীদের হেফাজতে রয়েছেন। ট্রলার ডুবির ঘটনায় বিভিন্ন এলাকার নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে কোস্টগার্ড মোংলা পশ্চিম জোন।
শনিবার দুপুরের দিকে অপরাজেয় বাংলা নামে কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ মোংলা সদর দপ্তরের জেটি থেকে সাগর অভিমুখে রওয়ানা হয়েছে।
শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, এবারের ঝড়ে আমাদের এলাকার দুটিসহ অন্যান্য এলাকার বহু ট্রলার ডুবে ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতি হয়েছে। ডুবে যাওয়া দুটি বাদেও শরণখোলার আরো ৪টি ট্রলারের ৫৬ জেলে নিখোঁজ ছিল। সেগুলোর সন্ধান মিলেছে। এসব ট্রলারের জেলেরা বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কাছাকছি নিরাপদে আছেন।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, সাগরে ঝড় ও ঢেউয়ের আঘোতে দুটি ফিশিং ট্রলার ১৮ জেলেসহ দুবলার মাঝের কিল্লার চরে উঠে আটকা পড়েছে। একটির নাম এফবি মায়ের দোয়া এবং অন্যটি নামবিহিন। মায়ের দোয়ার মাঝি ফোরকান হাওলাদার ও নামবিহিন ট্রলারের মাঝি রেজাউল ফরাজী ওই বন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। দুই ট্রলারের জেলেরা দুবলা সাইক্লোন শেল্টারে বনরক্ষীদের হেফাজতে রয়েছেন।
মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মামুন জানান, শনিবার দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। দুপুর ২টার দিকে মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (বিসিজিপি) অপরাজেয় বাংলা নামে জাহাজটি নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে রওয়ানা হয়েছে।
এএজে
