ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • ‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে : তারেক রহমান বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী হাসিনার সেই ‘৪০০ কোটি টাকার’ পিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-সঞ্চয়পত্র ফ্রিজ একজন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, একমত বিএনপি পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা আসামি : প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: ফয়জুল করীম আইএমএফের অর্থছাড়: ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো রিজার্ভ বাকেরগঞ্জের কারখানা নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়চ্ছেন মানুষ পন্টুনের ধাক্কায় ট্রলার থেকে ছিটকে নদীতে, জেলে নিখোঁজ
  • লকডাউনে থেমে নেই  মহাসড়কে চাঁদাবাজি

     লকডাউনে থেমে নেই  মহাসড়কে চাঁদাবাজি
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সারা দেশে সরকার ঘোষিত লকডাউনে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বল্প পরিসরে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতে থেমে নেই চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম। মহাসড়কে চলাচলরত ছোট কিংবা বড়, ট্রাক কিংবা মিনিবাস, হাইজ বা মাক্রোবাস, ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকেও পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন চিহিৃত চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি চলছেই। এক প্রকার প্রকাশ্যেই তারা পরিবহন শ্রমিক ও চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

    ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমড়াইল, কাঁচপুর, মদনপুর ও ডেমরা এলাকার স্টাফ কোয়াটারে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক, মহাসড়কে চলাচলরত সকল ছোট বড় যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে দুই শ থেকে পাঁচ শ টাকা পর্যন্ত  চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। যদি কোনো পরিবহন চালক চাঁদাবাজদের চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন তাহলে তাদের সাথে অসদাচারণসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন চালকরা।

    মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় গিয়ে কথা হয় এক পরিবহন মালিকের সাথে তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাইনবোর্ড এলাকায় অর্ধশতাধিক পরিবহন থেকে প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এ চাঁদার ভাগ পায় ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসনের কর্তাবৃন্দরাসহ বিভিন্ন চাঁদাবাজরা। এ এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী মোটরচালক লীগের মহানগর শাখার একটি কার্য্যালয় চোখে পড়ে। এ কার্য্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী মোটরচালক লীগের সভাপতি মামুন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাসুম মিয়া। তারা ওই সংগঠনের ব্যানারে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন পরিবহনগুলো থেকে।

    লকডাউনও তাদের চাঁদাবাজি থামেনি বলছেন পবিরহন শ্রমিক মালিকরা। তবে মামুন মিয়া ও মাসুম মিয়া জানান, চালকের সেবা দেওয়া আমাদের কাজ। আমরা পরিবহন থেকে কোনো চাঁদা উত্তোলন করি না।

    শিমড়াইল এলাকায় গিয়ে কথা হয় মাইক্রোবাস চালক ইয়ামিনের সাথে। তিনি  জানান, মহাসড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে হলে সেজুতি পরিবহনের কাউন্টার মালিক কামাল হোসেন, সেন্টমার্টিন পরিবহনের কাউন্টারের মালিক মোক্তার হোসেন, কাউসার মিয়া, লক্ষ্মীপুর কাউন্টারের মালিক আলামিন ও কবির হোসেন, মনোহরদী ও যাতায়াত পরিবহনের মালিক আবুল হোসেন ও উজ্জল হোসেন, হিমাচল পরিবহনের সুপারভাইজার সেলিম মিয়া, হোমনা পরিবহনের সুপারভাইজার মনির হোসেন, মতলব পরিবহনের কাউন্টার ম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব তাদের কাউন্টারে বসে চাঁদপুর, কুমিল্লা, হোমনা, দাউদকান্দি, চান্দিনা, নোয়াখালী, মাইজদি, চট্টগ্রামগামী যাত্রীদের কাছ থেকে এক শ থেকে তিন শ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে মাইক্রোবাস ও হায়েজগাড়ি দিয়ে তাদের গন্তব্যে পাঠানো হয়।

    কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হেলাল মিয়া, বাবুল হোসেন, কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদের নারী সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য জোহুরা আক্তার তার বাবা আব্দুর রব, মনোহরদী, নরসিংদী, সিলেটসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে থাকেন। তবে হেলাল মিয়া, বাবুল হোসেন ও জহুরা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তারা পরিবহন চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নন।

    মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় গিয়ে পরিবহন চালক ও মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বন্দরের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আমির হোসেন তার সহযোগী আলমগীর হোসেন শফিউল্লাহসহ একটি সিন্ডকেট মহাসড়কের চলাচলরত বিভিন্ন গণপরিবহন থেকে প্রতিদিন বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করে থাকেন। পরিবহন চাঁদাবাজিসহ আমির হোসেনের বিরুদ্ধে২০/২৫টি মামলা রয়েছে।

    ঢাকার ডেমরা স্টাফ কোয়াটার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীন পরিবহন, অসিম পরিবহন, রাজধানী পরিবহনসহ ২০/২৫টি গণপরিবহন রাস্তার উপর স্ট্যান্ড করে সড়কের অর্ধেক অংশ দখল করে রেখেছে। দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক ইনস্পেকটর ওই সকল চালক ও মালিকদের রিরুদ্ধে কোনো রকম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

    এ বিষয়ে কথা হলে ডেমরা স্টাফকোয়াটার এলাকায় দায়িত্বরত ট্টাফিক ইনস্পেকটর জিয়া উদ্দিন জানান, রাস্তা সংস্কারের কাজ চলার কারণে রাস্তায় বাধ্য হয়েই গাড়ি রাখছেন মালিক ও চালকরা। রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ হলে এ সকল সমস্যা আর থাকবে না।

    রাজধানী সুপার পরিবহনের চালক মাহবুর হোসেন  জানান, স্থানীয় চাঁদাবাজ ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিদিন আট শ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। বর্তমানে করোনা ও লকডাউনের কারণে তিন শ টাকা করে চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।

    অসিম পরিবহনের চালক দিদারুল ইসলাম জানান, আমরা গরিব, তাই বলে আমাদের কোনো দাম নেই। এমনিতেই আমরা অনেক কষ্টে বৌ বাচ্চা নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। তার উপর চাঁদাবাজের দৌরাত্ম কোনো অবস্থাতেই থামছে না। এ যেন মরার উপর খারার ঘাঁ। এ অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।

    স্বাধীন পরিবহনের চালক আবুল কালাম জানান, লকডাউনেও পরিবহন চাঁদা বন্ধ হয়নি। চাঁদা দিয়েই সড়ক মহাসড়কে পরিবহন চালাতে হয়।

    নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, সড়ক মহাসড়কে পরিবহন চাঁদাবাজি বন্ধে আমরা কঠোর থেকে কঠের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনোভাবেই চাঁদাবাজদের ছাড় দেওয়া হবে না।

    জানতে চাইলে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, মহাসড়কে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার ও মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। 


     


    এইচকেআর
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ