ঢাকা রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

Motobad news

রহস্যের হাসি দিয়ে বিসিবি ছাড়লেন সাকিব

রহস্যের হাসি দিয়ে বিসিবি ছাড়লেন সাকিব
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন


এমন গল্প যেন কোনো থ্রিলার বা রহস্যধর্মী সিনেমাতেই দেখা যায়। প্রতিটি পরতে পরতে তার নাটকীয়তা। ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী কবিতার সেই চরণ- শেষ হয়ে হইল না শেষ! শেষ সিদ্ধান্ত যেটা হয়েছে, ছুটি বাতিল হয়েছে সাকিবের, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। এখানেই কি সমাপ্তি, নাকি নাটক বাকি এখনো? প্রধান দুই চরিত্রে যখন সাকিব আর বিসিবি, তবে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না কোনো সম্ভাবনাই। 

সব শেষ সিদ্ধান্তের পর হাসি মুখে বিসিবি ছাড়লেন সাকিব আল হাসান। অথচ এক ঘণ্টা আগেও তার মুখ দেখে অনুমান করা মুশকিল ছিল, ঠিক কী চলছে তার মনে মধ্যে। শক্ত হয়ে থাকা চোয়াল, চেহারায় নেই চাঞ্চল্যের আভা। পাশ থেকে এক সহকর্মী তো বলেই বসলেন, ‘এমন সাকিবকে শেষ কবে দেখা গেছে?’ ২০১৯ সালে যেবার এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়লেন সাকিব, তখনকার স্মৃতি হাতড়েও মিলিয়ে নিলেন কেউ কেউ।

আজ থেকে পাঁচ দিন পিছনে ফিরে তাকানো যাক। ৬ মার্চ সন্ধ্যায় বনানীর একটি  পাঁচ তারকা হোটেলে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের দল মোহামেডামের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠান। সে অনুষ্ঠানে বাড়তি আকর্ষণ সাকিব। এই দলটির হয়েই এবার ডিপিএলে অংশ নেবেন গত আসরে অধিনায়কের দায়িত্ব সামলানো সাকিব। 

সে অনুষ্ঠান চলাকালীনই তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান। যাওয়ার সময় সংবাদমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলে যান, ‘ভাবলাম আপনার একটা ব্রেকিং নিউজ দিয়ে যাব!’ সে সময়ও সাকিবের মুখে ছিল রহস্যময় হাসি। 

সে ‘ব্রেকিংটি’ দিতে ঘণ্টা খানেক সময় নিলেন সাকিব। স্থান বদলে বনানীর পরিবর্তে কথা বললেন ঢাকা বিমানবন্দরে। দুবাইগামী বিমান ধরার আগে সাকিব বললেন, শারীরিক আর মানসিকভাবে খানিক বিশ্রাম চান। আন্তর্জাতিক সিরিজ অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চান না। 

সাকিবের ভাষায়, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে বলতে হয়, আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে যে অবস্থায় আছি, আমার মনে হয় না আমার পক্ষে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব। এ কারণেই আমার মনে হয় আমি যদি একটা ব্রেক পাই, আমি যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই, তাহলে আমার জন্য খেলাটা সহজ হবে। আফগানিস্তান সিরিজে আমার মনে হয়েছে আমি একজন প্যাসেঞ্জার। আমি যেটা হয়ে কখনই থাকতে চাই না।’

ইতিবাচক বা নেতিবাচক, বোর্ডের ভাবনা বোর্ড ভেবেছে। সাকিবকে পুনরায় ভাবার সময় দিয়ে অপেক্ষা করে দুই দিন। এরপর গত ৯ মার্চ সিদ্ধান্ত হয়, সাকিবকে ছুটি দেওয়ার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে না চাওয়া সাকিবকে সকল প্রকার ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয় আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। বোর্ডের তরফ থেকে ধানমন্ডিতে যখন এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়, তখনো পণ্যের বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে দুবাইয়ে সাকিব।

১০ মার্চ রাতে দেশে ফেরেন সাকিব। এরপর মুঠোফোনে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে। আজ সাকিব-পাপন সশরীরে বৈঠক করেন বিসিবি কার্যালয়ে। গোটা ছয়ের বোর্ড পরিচালক আর প্রধান নির্বাহীর উপস্থিতিতে হয় বৈঠক। এই বৈঠকে অংশ নিতে সাকিব আসেন দুপুর ১২.৪০টায়। ক্যামেরার লেন্সের শাটার পড়ার আগেই গাড়ি থেকে নেমে বিসিবি অফিসে সাকিব, এতো দ্রুত সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যান এই অলরাউন্ডার।

প্রাত দেড় ঘণ্টা বৈঠকের পর দুপুর সোয়া ২টায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি পাপন-সাকিব। যেখানে সাকিবের মুখ দিয়েই পাপন বললেন, ‘অভিমান’ ভুলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবেন তিনি। সঙ্গে এও জানালেন, এখন থেকে তার ছুটিছাটা বিষয় সকল সিদ্ধান্ত ক্রিকেট বোর্ডের হাতে।

সাকিব বলেন, ‘পাপন ভাইয়ের সঙ্গে পরশু রাতেও কথা হয়েছে, আজও ওনার সাথে কথা হয়েছে। যেহেতু আমি তিন ফরম্যাটেই আছি, তিন ফরম্যাটেই সবসময় অ্যাভেইলেবল থাকব। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কখন আমাকে বিশ্রাম দেওয়া দরকার। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও আমি এভেইলেবল।’

সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সাকিবকে নিয়ে আবার বিসিবি অফিসের ভেতরে গেলেন পাপন। বের হলেন সাড়ে ৩টার দিকে। এবার সাকিবের জন্য অপেক্ষা সংবাদমাধ্যম কর্মীদের। অপেক্ষা শেষ হলো ঘড়ির কাটায় যখন ৪টা বাজে। বিসিবির লিফট থেকে নেমে নিজের গাড়িয়ে উঠতে যেন সর্বোচ্চ ৪-৫ সেকেন্ড নিলেন সাকিব। মিরপুর ছাড়লে রহস্যময় এক হাসি নিয়ে।

খালি চোখে এমন হাসির পেছনে রহস্য খুঁজতে যাওয়া বোকামি হওয়ার কথা, কিন্তু এখানে চরিত্রের নামই যে সাকিব আল হাসান!


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন