স্ত্রী হত্যা: বাবুল আক্তারের মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলা নতুন মোড় নিচ্ছে। বাবুল আক্তার বাদী হয়ে করা মামলাটি আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় এ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। একই ঘটনায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনেরে করা পৃথক মামলাটিও তদন্তাধীন রয়েছে। আইনজীবীদের মতে, এক ঘটনায় দুই মামলা সাংঘর্ষিক হবে এবং আদালতে খারাপ নজির স্থাপন হবে।
বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) থেকে এ মামলার তদন্তভার নিয়ে অন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে। মামলাটি আদালত চাইলে সিআইডি, র্যাব, অ্যান্টি টেরোরিজমকেও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন আদালত।’
তিনি বলেন, ‘এক ঘটনায় দুই মামলা ঠিক না। এটা সাংঘর্ষিক হবেই। কেননা একটি বিষয়ের ঘটনা, সময়, প্যালেস অব অকারেন্স সবকিছু একটা জায়গায় নির্ধারিত। এ কারণে এ ঘটনায় দুই মামলা চলা উচিত না।’
এ ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘বাবুলের মামলা শেষ না হতেই এ মামলা করা হয়েছে। বাবুল যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে তার করা মামলায়ই তার বিচার করার সুযোগ আছে। এক ঘটনায় দুই মামলা এটা খারাপ নজির। উচ্চ আদালত থেকেও এটা বিধিনিষেধ আছে। এক ঘটনায় দুই মামলার কারণে অপরাধীরা সুযোগ পেতে পারে। পরবর্তীতে দেখা যাবে এ মামলার রেফারেন্স টেনে অন্য ঘটনায় দায়ের করা মামলায়ও একাধিক মামলা হতে পারে।’
মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে আমরা তদন্ত চালাব। মিতু হত্যায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৮ আসামির মধ্যে ৬ জনই গ্রেফতার আছেন। বাকি দুই আসামি কালু ও মুসাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে মাহমুদা খানম মিতুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় পরদিন স্বামী বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন তদন্ত করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে এ মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তদন্ত শেষে পিবিআই ১২ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। একইদিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুল আক্তারকে (মিতুর স্বামী) প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়ের করেন। ১৪ অক্টোবর বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় পিবিআইর দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন বাতিল চেয়ে আদালতে আবেদন করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী। ২৭ অক্টোবর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার বাকি আসামিরা হলো- কামরুল ইসলাম সিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু ও শাহজাহান মিয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘আমরা ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে আসতে না পারায় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার ২০১৬ সালের ৬ জুন একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর-০১। ধারা-৩০২/৩৪। ঘটনার পর বাদী বাবুল আক্তার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদী বাবুল আক্তারসহ প্রাপ্ত সব বিবাদী অত্র হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ পায়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত গায়েত্রি অমর সিং নামে এক এনজিও কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন বাবুল। পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় মিতুকে বাবুল তার বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম সিকদার মুসাসহ অন্য আসামিদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছেন।’
অন্যদিকে বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা তিন জনকে আসামি করা দায়ের করা মামলাটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণেই মিতু খুন হয়েছেন, এমন ইঙ্গিত করা হয়।
এমবি
