ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

লোকালয়ে পাখির অভয়াশ্রম, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত 

লোকালয়ে পাখির অভয়াশ্রম, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ঝালকাঠি শহরে লোকালয়ে পাখির অভয়াশ্রম, যা স্বচোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। শহরের মধ্যে আবার লোকালয়ে কিভাবে পাখির অভয়াশ্রম হয় তারই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রাকৃতিপ্রেমী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসুল হক মনু। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঝালকাঠিতে সফরকালে তার রেখে যাওয়া নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে উদ্বোধন বহুমূখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশেই বাঁশপট্টি এবং ফরিদপুর পট্টি। শহরের প্রাণ কেন্দ্র কুমারপট্টি কোল ঘেষেই ফরিদপুরপট্টি এবং বাঁশপট্টির অবস্থান। এসড়ক দুটিতে পদচারণা করলেই পাখির কিচিরমিচির শব্দ অনায়াসে কানে ভেসে আসবে। মনে হবে আমাজন বনের কোনো নির্জন স্থানে পাখির অভয়াশ্রমে ঢুকে পড়েছে। এলাকাবাসীও অতি যত্নে আগলে রেখেছেন পাখিদের। 

নিরাপদ আশ্রয় আর মানুষের ভালোবাসায় গ্রামে পাখির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাসা বাড়িতেও নীড় তৈরি করে কয়েক বছর ধরেই চলছে পাখি ও মানুষের এই মিতালি। গোটা এলাকার মানুষ নিরাপত্তা দিয়ে আগলে রেখেছে পাখিদের। পাখি শিকারিদের ঠেকাতে এখানে এলাকাবাসী অত্যন্ত সচেতন। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুব ভোরে পাখিরা জেগে ওঠে। কিচিরমিচির করে। সকাল- বিকেল এক সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পাখিগুলো ডানা মেলে উড়ে। পোকামাকড়সহ খাদ্যের খোঁজে মাটিতে নামে। উড়ে যায় খাবারের সন্ধ্যানে। সন্ধ্যার আগে আগে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ফিরে আসে নীড়ে। রাতে এবং বৃষ্টির সময় যাতে পাখির খাদ্য সংকট না হয় এজন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কলা। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির প্রতি পরম মমতায় কয়েক বছর ধরেই দেখভাল করেন তারা। 

ওই এলাকার বাসিন্দা কামরুল ও জহুরুল বলেন, প্রাকৃতিপ্রেমী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসুল হক মনুর বাগানবাড়িতে এবং বাঁশপট্টি ও ফরিদপুরপট্টি রাস্তার দুপাশে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছে পাখি বাসা তৈরি করে। 

হেলাল নামে একজন বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি থাকে এখানে। পাখির বিষ্ঠা ছড়ায় লোকালয়ে। গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ঘরের টিন নষ্ট হয়। গাছের ফল আম, জলপাই, পেয়ারা, আমড়া এগুলো আমরা খেতে পারি না। তবে কেউ তাতে বিরক্ত হয় না। পাখির দেখভাল করে। নিজেরা কেউ পাখিকে বিরক্ত করে না। 

গৃহবধূ মোমেনা বেগম বলেন, বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে শামুকখোল পাখি বাস করে। ক্ষুধা পেলে অনেক পাখি উঠানে আসছে। চাল, খুদ, ভাত খায়। অন্য রকম এক মায়া পড়েছে পাখির ওপর। 

ব্যবসায়ী শামসুল হক মনু জানান, পাখি শিকার করা, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ প্রভৃতি অতিথি পাখির প্রধান শত্রু। আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। এক শ্রেণির লোভী শিকারীর নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির অতিথি পাখি। জালের ফাঁদ পেতে, বিষটোপ এবং ছররা গুলি দিয়ে নির্বিচারে পাখি শিকার চলছে প্রতিনিয়ত। কেউ শখের বশে আবার কেউ বাজারে বিক্রির জন্য অতিথি পাখিদের ধরে চলেছে। পাখিগুলোকে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। পাখিগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। 

ঝালকাঠি সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসাম্মাৎ জেবুন্নেছা জানান, আশঙ্কাজনক হারে আমাদের দেশে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমরা পাখি দেখতে গেলেই পাখির খুব কাছে যেতে চাই। ঢিল মেরে আতঙ্কিত করে পাখি ওড়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে চাইলে তা পাখির অবাধ বিচরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

এছাড়াও নদীপথে লঞ্চ, স্টিমার, স্পিড বোট, ট্রলারের শব্দেও পাখির আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তাই আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদেরও সহযোগিতা করতে হবে।  


এইচেকআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন